কক্সবাজার

কক্সবাজার অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সাগর-পাহাড়ের অপূর্ব মিতালী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য, নানা ধর্মের-বর্ণের মানুষের অসাম্প্রদায়িক সহাবস্থান, পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের সমাহারসহ প্রকৃতির ভিন্নতর বৈশিষ্ট্যের কারণে কক্সবাজার একেবারেই অনন্য। বলা হয়, স্বাস্থ্যকর স্থান এবং নৈসর্গিকসৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত কক্সবাজার। মেরিন ড্রাইভ ধরে ভ্রমণ যেন হার মানিয়ে দেয় যেকোন ভিডিও গেমকে। কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগর ও পাহাড়ের বুক চিরে চলে গেছে দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার সড়কটি। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের পাশ দিয়ে তৈরি বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ। এরই পাশে গড়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্প; কুতুপালং। আর এই রোহিংগা সংকটকে বলা হচ্ছে এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট। এরকম নানা কারণে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি নিবন্ধ হয়েছে কক্সবাজারে।
এখানে রয়েছে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনসহ প্রধান ৭টি দ্বীপ। আর সাগর-পাহাড় কেন্দ্রীক নানা আয়োজন। বিশেষ করে সার্ফিং, প্যারাসাইলিং, স্কুভা ডাইভিং এর মতো অ্যাডভ্যাঞ্জার একেবারেই ভিন্নতর। তবে এরকম আয়োজনগুলো এখনও খুবই সীমিত পরিসরে কক্সবাজারে। এজন্য হতাশাও আছে পর্যটকদের মাঝে।


বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মুসলমানের ইজতেমায় যেমন লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষের জমায়েত হয়। হিন্দুদের প্রতিমা বিসর্জনেও উপছে পড়া ভীড় নামে সৈকতে। বৌদ্ধদের প্রবারণায় কল্প-জাহাজভাসে বাঁকখালীতে। কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়; মানুষকে শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সৈকতে বসে ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব। এছাড়া ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকের ঢল নামে কক্সবাজারে। কিন্তু নানা কারণে অস্বাস্থ্যকর স্থানে পরিণত হতে চলেছে কক্সবাজার। পরিবেশ বিধ্বংসী উন্নয়নের থাবা ক্রমশ: ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে কক্সবাজারকে। কাজেই পরিচ্ছন্ন এবং পর্যটক বান্ধব নগরীতে রূপান্তরিত হয়নি কক্সবাজার।
ঊনিশশো নব্বইয়ের দশক ধরে নির্মাণাধীন মেরিন ড্রাইভটি ২০১৭ সালের ৬ মে উদ্বোধন হলেও এখনও নির্মিত হয়নি শুরুর অংশটি। ফলে কখনো সংযোগ সড়ক, কখনো সৈকতের উপর দিয়েই পৌঁছতে হয় মেরিন ড্রাইভে।
এছাড়া বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার, অনিয়ম-দুর্নীতি, বেদখল এবং অপেশাদার পর্যটন বাণিজ্যের কারণে কাঙ্ক্ষিত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেনি কক্সবাজার।
অবশেষে কক্সবাজারকে আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার মহা-পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করে সরকার।
বর্তমানে বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে কক্সবাজার কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে: কর্ণেল (অব:) ফোরকান আহমদ। কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরা গেলে বিশ্ব পর্যটকদের আকৃষ্ট করা সহজ হবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান সমূহ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

কক্সবাজারে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত যা কক্সবাজার শহর থেকে বদরমোকাম পর্যন্ত একটানা ১২০ কি.মি. বিস্তৃত। কক্সবাজা্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র। বাংলাদেশের ভিতরে কোথাও ভ্রমনের চিন্তা করলে সবার প্রথমে অবশ্যই কক্সবাজারের নাম আসবে। শুধু মাত্র দেশীয় পর্যটকই না, দেশের বাইরে থেকেও প্রতিবছর প্রচুর বিদেশী পর্যটক এই সমুদ্র সৈকত দেখতে আসেন। বিস্তীর্ণ বেলাভূমি, সারি সারি ঝাউবন, সৈকতে আছড়ে পড়া বিশাল ঢেউ, সমুদ্রে চলা মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলার, সকালবেলা পাহাড় ভেদ করে রক্তবর্ণের থালার মতো সূর্য, সন্ধ্যায় দিগন্তে সূর্যাস্তের মায়াবী আলো এসব সৌন্দর্যের পসরা নিয়েই বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে রচনা করেছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার।

বিস্তারিত
হিমছড়ি

হিমছড়িঃ হিমছড়ি কক্সবাজারের ১৮ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। পাহাড় আর অপরুপ ঝর্ণা এখানকার প্রধান আকর্ষণ। কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি যাওয়ার পথে বামদিকে সবুজঘেরা পাহাড় আর ডানদিকে সমুদ্রের নীল জলরাশি মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি করে। বর্ষার সময়ে হিমছড়ির ঝর্ণাকে অনেক বেশি জীবন্ত ও প্রাণবন্ত বলে মনে হয়। হিমছড়িতে পাহাড়ের চূড়ায় একটি রিসোর্ট আছে যেখান থেকে বিশাল সমুদ্রের দৃশ্য এক নজরে দেখা যায়।

বিস্তারিত
ইনানী সীবিচ

ইনানী বিচঃ দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন আকর্ষণীয় এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম ইনানী সমুদ্র সৈকত যা কক্সবাজার থেকে ৩৫ কি.মি. এবং হিমছড়ি থেকে ১৭ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। অভাবনীয় সৌন্দর্যে ভরপুর এই সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজার থেকে মাত্র আধঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। পরিষ্কার পানির জন্য জায়গাটি পর্যটকদের কাছে সমুদ্রস্নানের জন্য উৎকৃষ্ট বলে বিবেচিত। ইনানী বিচে ভাটার সময় সমুদ্রের মাঝে অনেক প্রবাল পাথর দেখতে পাবেন।

বিস্তারিত
সোনাদিয়া

সোনাদিয়া দ্বীপ যেন ক্যানভাসে আঁকা ছবি। অপরূপ সৌন্দর্যের আধার এ দ্বীপ কক্সবাজার শহর থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমের দূরে সাগর গর্ভে অবস্থিত। দ্বিপের আয়তন লম্বায় ৭ কিমি, প্রস্থ ২.৫ কিমি। এই দ্বিপের তিন দিকে সমুদ্র সৈকত, সাগর লতা-পাতা ঢাকা বালুতীর, কেয়া- নিশিন্দার ঝোপ, ছোট-বড় খাল বিশিষ্ট প্যারাবন। আরো আছে বিচিত্র প্রজাতির জলচর পাখি। এই দ্বিপে আছে অজস্র লাল কাঁকড়ার ছড়াছড়ি। আছে গাংচিলের ভেসে বেড়ানো।

বিস্তারিত
সেন্টমার্টিন

কক্সবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে সাগর বক্ষের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ৭.৩ কি.মি দীর্ঘ কিছুটা উওর-দক্ষিণ বিস্তৃত। দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কি.মি. এবং লোক সংখ্যে প্রায় ৮ হাজার। কক্সবাজার থেকে লোকাল বাস বা জীপে করে টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে সীট্রাক বা ট্রলারে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়। টেকনাফ যেতে সময় লাগবে এক থেকে সোয়া এক ঘন্টা এবং সেখান থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগবে প্রায় দু ঘন্টা। সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারে ২০ মিনিটে ছেড়া দ্বীপ যাওয়া যায়। ছেড়া দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত নয়ানাভিরাম দ্বীপ।  

বিস্তারিত
ছেড়াদিয়া-সেন্টমার্টিন

ঈদের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনায় ছেড়াদিয়া বা ছেড়াদ্বীপকে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রাখার মতো। ছেড়াদ্বীপ মানে হচ্ছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। আসলে নারিকেল জিনজিরা বা সেন্ট মার্টিন দ্বীপের আশপাশে এ রকম দ্বীপের সংখ্যা একটি নয়, বরং বেশ কয়েকটি। যদিও পর্যটকদের কাছে মূলত নিকটতমটিই ছেড়াদ্বীপ নামে পরিচিত। আর স্থানীয় বাসিন্দারা যেহেতু দ্বীপকে দিয়া বলে ডাকে, তাই এর স্থানীয় নাম সিরাদিয়া বা ছেড়াদিয়া। সেন্ট মার্টিনের মতোই ছেড়াদ্বীপ চুনাপাথর, ঝিনুক, শামুকের খোলস এবং প্রবাল দিয়ে তৈরি। সমুদ্রপথে ছেড়াদ্বীপে যাওয়ার মোক্ষম সময় হচ্ছে ভাটার সময়।

বিস্তারিত
ডুলাহাজরা সাফারী পার্কঃ

কক্সবাজার শহর থেকে ৩৫ কি.মি. উত্তরে এই সাফারী পার্কের অবস্থান। এটি বাংলাদেশের প্রথম সাফারী পার্ক। বিলুপ্তপ্রায় ও বিরল প্রজাতি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও বংশবৃদ্ধিসহ মানুষের চিত্ত বিনোদন, গবেষণা ইত্যাদি পরিচালনার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন চকরিয়া উপজেলা এলাকায় স্থাপিত "ডুলাহাজারা সাফারী পার্ক" পর্যটকদের আকর্ষনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে কয়েক হাজার পশু-পাখী।

বিস্তারিত
মেরিন ড্রাইভ রোড

বর্তমানে কক্সবাজার ভ্রমনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ রোড (Marine Drive Road)। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রোড কক্সবাজারের কলাতলী থেকে শুরু হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। মেরিন ড্রাইভ রোডের এক দিকে রয়েছে উত্তাল সমুদ্র সৈকত আর অন্য দিকে রয়েছে সবুজের ঢাকা ছোট-বড় পাহাড়। আবার কোথাও কোথাও পাহাড়ের গা বেয়ে ঝর্ণা ধারার দেখা মিলে। মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে যেতে যেতে বিস্তৃত সাগরের সমস্ত সৌন্দর্য্য আহরণ ও জেলেদের সাগরে মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ করা যায়। সেই সাথে সমুদ্র সৈকতে দেখা মিলবে টেকনাফ গর্জন ফরেস্ট খ্যাত চিরহরিৎ বন। কক্সবাজারের কলাতলী বা সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে খোলা জিপ, মাইক্রোবাস, সিএনজি কিংবা অটোরিকশায় মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে হিমছড়ি ও ইনানী সমুদ্র সৈকত যাওয়া যায়।

বিস্তারিত
মহেশখালী

বাংলাদেশের শীর্ষ পর্বত শৃঙ্গ হিসেবে মাথা উঁচু করে আছে বান্দরবানের সাকাহাফং পর্বত যা মদক তং বা মোদক তুয়াং নামেও পরিচিত। কিছুদিন আগেও কেওক্রাডং বা তাজিংডং কে বাংলাদেশের শীর্ষ পর্বত শৃঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও ইউএস টপোগ্রাফি ম্যাপ, রাশিয়ান টপোগ্রাফি ম্যাপ, গুগল ম্যাপ, গুগল আর্থসহ বিভিন্ন অভিযাত্রীদের নেওয়া জিপিএস রিডিংয়ের মাধ্যমে জানা গেছে এখন সাকহাফং-ই বাংলাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ। মাপজোকের হিসাব অনুসারে কোনোটা ৩৪৫৪, ৩৪৪৫ বা ৩৪১০ ফুট।

বিস্তারিত
রামু বৌদ্ধবিহার

কক্সবাজার জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা হচ্ছে রামু। পুরাকীর্তিসমৃদ্ধ রামুতে রয়েছে অনেক প্রাচীন বৌদ্ধ নিদর্শন। রামুতে সর্বমোট ৩৫টি বৌদ্ধ মন্দির ও জাদি রয়েছে। রামুর উত্তর মিঠাছড়ির পাহাড়চূড়ায় রয়েছে গৌতম বুদ্ধের ১০০ ফুট লম্বা সিংহশয্যা মূর্তি। আর মাত্র দুই কিলোমিটার অদূরেই কেন্দ্রীয় সীমাবিহার নতুন করে নির্মিত হয়েছে। কিছুটা দক্ষিণে এগিয়ে গেলেই রয়েছে নজরকাড়া লালচিং ও সাদাচিং বৌদ্ধ বিহার। এছাড়াও আশপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ছোট-বড় আরো অনেক বৌদ্ধ বিহার।

বিস্তারিত
লাবনী পয়েন্ট ও কলাতলী বিচ

লাবনী পয়েন্ট ও কলাতলী বিচঃ কক্সবাজার শহর থেকে নৈকট্যের কারণে লাবণী পয়েন্ট এবং কলাতলী বিচ পর্যটকদের কাছে প্রধান সমুদ্র সৈকত বলে বিবেচনা করা হয়। লাবনী পয়েন্ট থেকে কলাতলী বিচ হেটে যেতে ১৫ মিনিট লাগবে। লাবণী পয়েন্টে পাবেন ঝিনুক মার্কেট এছাড়াও ছোট বড় অনেক দোকান যেখানে নানারকম জিনিসের পসরা সাজিয়েছে দোকানীরা যা পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ। এছাড়া কলাতলী বিচে আছে সমুদ্রের ধার ঘেষে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট যেখানে খেতে খেতে মনোরম সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন।

বিস্তারিত
Free Web Hosting